থাইল্যান্ডের ব্লাক হোল বা কালো হাঁস পালন একটি লাভ জনক ব্যবসা।যেমন তেমন দ্রুত কালো হাঁস বাড়ে,তেওন দ্রুত ডিম দেই।গায়ের রং যেমন কালো তেমন সুন্দর তা এর নাম করণ করা হয়েছে কালো হাঁস। আমরা সাধারণত কৃষি কাজ বা কৃষি খামার নিয়ে কাজ করে থাকি।আপনাদের উন্নতি আমাদের কাম্য তাই আমরা নিয়মিত ওয়েবসাইটে কৃষি কাজ বা কৃষি খামার এর সকল তথ্য আপডেট করার চেষ্টা করে থাকি।
আপনারা তথ্য টি সুন্দর করে পড়ুন এবং থাইল্যান্ডের কালো হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করুন এবং আপনা্র বন্ধুদের থাইল্যান্ডের কালো হাঁস পালন করার জন্য সাহায্য করুন এই তথ্য গুলা সিয়ার করে আপনার প্রিয় জনকে খামার ব্যবসা করার জন্য সাহায্য করুন।প্রতি নিয়োত নিউ আপডেত পেতে আমাদের ওয়েবসাইট এর সাথে থাকুন।
ব্লাক হোল বা কালো হাঁস পালন
আসসালামু আলায়কুম সবাই কে জানাই এগ্রোহ্যাভেন এর পক্ষ থেকে সবাই কে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুবেচ্ছা।আজকের টপিক বা বিষয় হল থাইল্যান্ডের কালো হাঁস পালন । এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি । যত দিন যাবে তত কৃষি উন্নতি হবে ।তাই দিন দিন সময়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি।সেই সাথে বেড়ে যাচ্ছে মানুষের খাদ্যের চাহিদা। তাই আমাদের মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরন করার জন্য এই হাস তৈরি করা হয়েছে।এই হাঁস টি কালো রঙের হয়ে থাকে।
হাঁসের বিবারণঃ
ব্লাক হোল হাঁস চেনার উপায় হল,এই হাঁস টি পুরা কালো রং এর হয়ে থাকে। হাঁসের ঠোট কালো হয়ে থাকে এবং চোখ ও কালো হয়ে থাকে।এর পুরা শরীর কালো সুধু মাত্র গলার নিচের অংশে একটু সাদা রং হয়ে থাকে । এই কালো রং টি অনেক উজ্জল রঙের হয়ে থাকে।রোদে গিলে পুরো শরীরের কালো রং চিকচিক করে ।এই হাঁসের পায়ের রং ও কালো হয়ে থাকে। এটি অন্য হাসের থেকে বেশি ডিম দেয় এবং মাংস ও বেশি হয়।
উপযোগীতাঃ
ইহা ডিম ও মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ, কারণ প্রাপ্ত বয়স্ক একটি হাঁসা প্রায় ২.৫০ থেকে ৩ কেজি হয়ে থাকে । বৎসরে গড়ে প্রায় .৩০০ থেকে ৩২৫টি ডিম দেয় এবং এর বেশি ও দিতে পারে।এই হাঁসের মাংস অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে।
উৎপত্তি স্তানঃ
ব্লাক হোল হাঁসের আদি জন্ম স্থান থাইল্যান্ডে।এই হাঁস টি সর্ব প্রথম থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।এই হাঁস টি অতি উন্নত জাতের।
বৈশিষ্টটামুট.
- পালকের রং কলো।
- মাথায় কোন ঝুটি নাই।
- গলার নিচে এক জায়গাতে সাদা।
- ডিমের রং সাদা ও কালচে।
- দেহের আকার মোটামুটি বড়।
হাঁস এর বাসস্থানের জন্য স্থান নির্বাচনঃ
- সর্ব প্রথম উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে যেন বন্যা সময় পানিতে ডুবে না যায়।
- সুন্দর করে ঘর টি ঘিরতে হবে যেন বর্ষার সময় পানি ঢুকে না যায়।
- উপররে সাওনি বা চাল টা সুন্দর করে দিতে হবে যেন ঝরে উরে না যায়।
- বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে।
- ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- সামনে একটি পুকুর বা লেক থাকতে হবে।
- মাংস ও ডিম বাজারজাত করার সুবিধা থাকতে হবে।
- পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- সুন্দর ভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- সব সময় চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
- খোলা মেলা ও নিরিবিলি পরিবেশ নির্বাছন হলে ভালো হয়।
হাঁসের ঘর তৈরীঃ
ব্লাক হোল হাঁস পালনের করার ওপর ভিত্তি করে আপনি হাঁসের ঘর বিভিন্ন প্রকারের তৈরি করতে পারেন। যেমন-
- আপনি যদি ডিম ফুটাতে চান তাহলে হ্যাচারি ঘর তৈরি করতে পারেন।
- আবার বাচ্চা পালন করার জন্য বাচ্চার ঘর তৈরি করতে পারেন।
- যদি হাঁস পালান আপনার মাংসের জন্য হয়ে থাকে তাহলে আপনি গ্রোয়ার ঘর তৈরি করতে পারেন।
- আর যদি হাঁস পালান আপনার ডিমের জন্য হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে ডিমপাড়া ঘর তৈরি করতে হবে।
- এবং এই ঘর গুলির চাল যেওন ভাবে দিবেন যেমনঃ- একচালা বা শেড টাইপ, দোচালা ইত্যাদি ।
হাঁসের বাচ্চা পালনঃ
বাচ্চা পালনের ঘর বা শেড অবশ্যই উঁচু স্থানে হতে হবে (জমি থেকে 1-1.5 ফুট) উপরে তৈরি করতে হবে যাতে কোনও পরিস্থিতিতে ঘরের ভিটি ভিজে না যায় বা স্যাঁতসেঁতে না হয়। খামারের মেঝে পাকা করা ভাল। শুকনো চালের কুড়া বা শুকনো কাঠের গুঁড়ো মেঝেতে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পুরু করে ছড়িয়ে দিতে হবে। নীচে থেকে মেঝে ভিজতে পারে ,তাই প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২থেকে ৩ বার, আপনাকে লিটারটি উল্টাতে হবে এবং চুন মেশাতে হবে। এটি লিটার শুকিয়ে যাবে বা জীবাণু মেরে ফেলবে এবং গন্ধ দূর করবে। কোনও পরিস্থিতিতে ঘরের মেঝেতে বৃষ্টির জল যাতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কখনও লিটার ভিজে যায় তবে তা ফেলে দেওয়া উচিত এবং তাত্ক্ষণিকভাবে শুকনো লিটার দিতে হবে। বাচ্চা সংগ্রহের পরে তাদের প্রথমে ভিটামিনের সাথে মিশ্রিত জল দেওয়া উচিত। তারপরে শুকনো খাবার সামান্য পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বাচ্চাকে দিনে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ বার খাওয়ানো উচিত এবং প্রতিটি বাচ্চাকে ৫থেকে ১০গ্রাম সুষম খাদ্য দেওয়া উচিত। এটি লক্ষ করা উচিত যে একটি ছোট বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় প্রথমে জলের পাত্রে জল দেওয়া প্রয়োজন।প্রথমে পানি দিয়ে পরে খাবার দিতে হবে নতুবা শুকনো খাবার বাচ্চার গলায় আটকে বাচ্চা মারা যেতে পারে। একদিনের বাচ্চার জন্য ব্রুডিং দরকার। প্রথম সপ্তাহে ঘরের তাপমাত্রা .৯৫ডিগ্রি ফারেনহাইট হবে, তবে প্রতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট হ্রাস করতে হবে। সাধারণত গ্রীষ্মে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ এবং শীতকালে ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ – শিশুকে উষ্ণ করা দরকার। তবে চরম খরা বা প্রচণ্ড শীতে এটি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
থাইল্যান্ডের কালো হাঁস পালন পদ্ধতি
আমরা হাঁস বিভিন্ন ভাবে পালন করতে পারি যেমনঃ-
- মুক্ত পদ্ধতি ।
- আবদ্ধ পদ্ধতি ।
- অর্ধ আবদ্ধ পদ্ধতি ।
- হার্ডিং পদ্ধতি ।
- ল্যানটিং পদ্ধতি।
মুক্ত পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধিতে হাঁস পালন করা খুব কম খরচ।সকাল হলে হাঁসের ঘরের দরজা খুলে দিতে হয় এবং রাতের বেলায় দরজা লাগিয়ে দিতে হয়।আর সকালে ও রাতে অল্প কিছু খেতে খেতে দিতে হয় ,আর সারাদিন তারা খাল-বিলে ,নদী-নালা ,পুকুর , হাওড়-বাওড় ও ডুবাতে খেয়ে বেড়ায়।জায়গা ও কম লাগে কারন সুধু রাত্রের বেলাই ঘরে থাকে।
আবদ্ধ পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধিতে হাঁস পালন করলে সব থেকে বেশি খরচ। কারন এই পদ্ধিতিতে হাঁস কে ঘরের ভিতর আটকে রেখে পালন করতে হয়। ডিম পারার জন্য রাত্রের বেলাই নিদিষ্ট সময় আলো বন্ধ করে দিতে হয় এবং দিনের বেলায় আলো প্রবেশ করাতে হয় কারন যাতে সকল হাঁস খাবার খেতে পারে।
এদের জায়গাও বেশি লাগে। প্রতি প্রাপ্ত বয়সক হাঁসের জন্য ৩ বর্গফুট এবং বাড়ান্ত হাঁসের জন্য ২ বর্গফুট জায়গা লাগে।
আবদ্ধ পদ্ধতি তে হাঁস তিন ভাবে পালন করা যায়। যেমনঃ
- পাকা ফ্লোরে হাঁস লালন পালন করা যায় ।
- খাঁচাতে হাঁস লালন পালন করা যায় ।
- তারের জালের ফ্লোরে বা মাচা হাঁস লালন পালন করা যায় ।
- পাকা ফ্লোরে হাঁস লালন পালনঃ এই পদ্ধিতিতে পাকা ইটের ফ্লোরের তৈরী করে তার উপর চাউল এর তুষ বা কুড়া ও ছাই দিয়ে লিটার তৈরী করে দিতে হয়।এই ভাবেই ফ্লোরে হাঁস লালন পালন করতে হয়।
2, খাঁচাতে হাঁস লালন পালনঃ এই পদ্ধিতিতে খাচা তৈরি করতে হয় এবং একটির উপর একটি খাঁচা থাকে এর ভিতর তাদের আবদ্ধ করে রাখে খাঁচাতে হাঁস লালন পালন করতে হয়।
- তারের জালের মাচা হাঁস লালন পালনঃ এই পদ্ধিতিতে তারের মাচা বা ফ্লোরের তৈরী করতে হয়।এই মাচা বা ফ্লোর মাটি থেকে ৩ ফুট থেকে ৪ ফুট উচুতে তৈরী করতে হয়। তারের জালের মাচার নিচে যে জাগা থাকে , সেখানে দিনের বেলায় হাঁস চরান বা লালন পালন করা যায়।এতে হাঁস ভালো থাকে এবং হাঁসের বিষ্ঠা খুব সহজে পরিষ্কার করা যায়।এতে হাঁসের রোগ বালাই ও কম হয়।
অর্ধ আবদ্ধ পদ্ধতিঃ
অর্ধ আবদ্ধ পদ্ধিতিতে রাত্রের বেলায় ঘরে আবদ্ধ থাকে এবং দিনের বেলায় ঘরের সামনে ছোট জায়গা ঘিরে ছেড়ে দেওয়া থাকে এবং বদ্ধ জাগায় তারা ঘুরে বেড়ায় । তাদের খাবার ঘরের ভিতর ও ঘরের সামনে চরণ জাগায় ও দেওয়া থাকে।তাদের ইচ্ছা মত তারা খাবার খায়।ঘরে সামনে একটি হাউজ বা চৌবাচ্চা দিতে পারেন।যদি এটি দেন তাহলে হাঁসের জন্য ভাল।হাউজ বা চৌবাচ্চা প্রস্থ ২০ থেকে ২৫ ইঞ্চি ও গভীরতা ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি হলে ভালো হয় যদি এর বেশি হয় তা আপনার হাঁসের জন্য খুব ভালো ।হাউজ বা চৌবাচ্চা টি এমন ব্যাবস্থা করবে যাতে করে হাসে ভালো ভাবে পানি পান করতে পারে।
হার্ডিং পদ্ধতিঃ
হার্ডিং পদ্ধিতিতে হাঁস গুলোকে ঘরে লালনপালন করা হয় না।এরা কখন ঘরে থাকে না ।এদের খাবার খাওতে বিভিন্ন জায়গাই নিয়ে যাওয়া হয় । যেখানে খাবার আছে সেখানে তাদের চারণ করা হয়।যে সকল জায়গায় খাবার খাওয়ান হয় সেখানে সারাদিন খাবার খাইয়ে তারা উঁচু স্থানে নিয়ে গিয়ে সেখানে তাদের আটকিয়ে হাঁস গুলা থাকার ব্যবস্থা করা হয়।এভাবে হাঁস গুলোকে এক স্থানে খাওয়ান শেষ হয়ে গেলে অন্য স্থানে নিয়ে খাবার খায়ান হয়।এবাবে এই হাঁস গুলোকে লালন পালন করা হয়।
ল্যানটিং পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধিতে হাঁস পালন করা খুব কম খরচ ও কম জায়গা তে লালন পালন করা যায় ।এই পদ্ধতি টা কিছুটা মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁস চাষের মত। এর ঘর ছোট হয়ে থাকে।এই পদ্ধিতিতে ঘরটি নদী-নালা, বড় বড় খাল , বিল, হাওড়,বাওড়,বড় মাঠ এর আশেপাশে এর ঘর তৈরী করা হয়।যাতে করে সারাদিন খেয়ে তারা রাতের বেলা নিরাপদে থাকে। এক পালে সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ হাঁস লালন পালন করা যায়।
খামারের দৈনিক কার্যক্রম সূচিঃ
সকল খামারে দৈনিক কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রকৃতপক্ষে খামার ব্যবস্থাপনার উপরই খামারের লাভ লোকসান ।
সকাল ৮ থেকে ৯ টার সময়
- শেডটি একটি জীবাণুমুক্ত অবস্থায় প্রবেশ করতে হবে এবং হাঁস-মুরগির সামগ্রিক অবস্থা এবং আচরণ পরীক্ষা করা উচিত।
- মৃত বাচ্চা / মুরগী থাকে তবে তা অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা উচিত।
- দরজা বা ঘরের সব ঠিক আছে কিনা তা ভালো ভাবে দেখতে হবে ।
- পানির পাত্র / খাবারের পাত্র পরিষ্কার করা দরকার।
- পাত্রে যদি খাবার ও জল না থাকে তবে এটি পরিষ্কার করে খাবার এবং জল সরবরাহ করতে হবে।
- লিটারের টি পরীক্ষা করা উচিত এবং প্রয়োজনে তা নাড়াচাড়া করে দিতে হবে।
- খাবার দেওয়ার পরে, আপনাকে কিছুক্ষণ দাঁড়াতে হবে এবং সকল হাঁস পরীক্ষা করতে হবে।
দুপুর ১২ থেকে ১ টার সময়
- খাদ্য সরানো আবশ্যক।
- পানি গরম এবং নোংরা হলে তা পরিবর্তন করে পরিষ্কার এবং ঠান্ডা পানি দিন।
- ডিম থাকলে তা সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
বিকাল ৪ থেকে ৫ টার সময়
- পাত্রে যদি খাবার বা জল না থাকে তবে এটি সরবরাহ করা উচিত।
- ডিম সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
- দরজা বা ঘরের সব ঠিক আছে কিনা তা ভালো ভাবে দেখতে হবে ।
- হাঁসের আচরণ গুলো পরীক্ষা করা দরকাসে
খামারের সাপ্তাহিক কাজঃ
- খাদ্য প্রস্তুত করা আবশ্যক।
- বাচ্চা /বড় হাঁসের নমুনা ওজন নেওয়া উচিত।
- ঘর পরিষ্কার করা দরকার।
- হাউস লাইট সপ্তাহে ২ দিন পরিষ্কার করা দরকার।
- খাবার ও জলের পাত্রে পরিষ্কার করতে হবে এবং লিটার শুকন রাখতে হবে।
- বিভিন্ন ব্যয়, আয় এবং ফার্মের সকল হিসাব করতে হবে।
- সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্য বা কাগজ সংগ্রহ করতে হবে।
Tag:- থাইল্যান্ডের কালো হাঁস, থাইল্যান্ডের ব্লাক হোল হাঁস, black hole has, ব্লাক হোল হাঁস, কালো হাঁস, কালো হোল হাস,black hole duck ,