Home » খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুর এক ধরনের তালজাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটি একটি রসালো ফল হিসেবে পরিচিত। বহু বছর ধরে খেজুর গাছ চাষাবাদ চলছে। এই গাছ প্রধানত মরুভূমি এলাকায় ভাল জন্মে। খেজুরের গাছের ফল খেজুর নামে পরিচিত।  খেজুর গাছের দ্বিপদ নামের প্রজাতিক অংশ এর অর্থ “খেজুর বহনকারী। চারটি পর্যায়ে খেজুরকে পাকানো হয়। আরবী ভাষায় সেগুলো বিশ্বব্যাপী কিমরি (কাঁচা), খলাল (পূর্ণাঙ্গ, ক্রাঞ্চি), রুতাব (পাকা, নরম), তমর (পাকা, সূর্যে শুকানো) নামে পরিচিত।

পুষ্টি উপাদান:- খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি। যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয়, চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরের রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান। উদাহরণস্বরূপ খুরমা খেজুর।

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

খেজুর খুবই সুস্বাদু ও সুপরিচিত ফল, যা ফ্রুক্টোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। খেজুরকে চিনির বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খেজুর মানব দেহের শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। এই ফলে প্রচুর ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে  যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

চার বা ৩০ গ্রাম খেজুরের যে পুষ্টিগুণ রয়েছে :-

পুষ্টিগুণ পুষ্টির পরিমান
ক্যালরি ৯০ গ্রাম
প্রোটিন   ০১ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৩ গ্রাম
ফাইবার ২.৮ গ্রাম

এছাড়াও খেজুরে রয়েছে আরও অনেক পুষ্টিগুণ।

খেজুরের উপকারিতা :-

প্রতি ১০০ গ্রাম পরিষ্কার এবং তাজা খেজুরে ভিটামিন সি থাকে যা থেকে ২৩০ ক্যালোরি শক্তি উৎপাদন করে।  প্রাচীন কাল থেকেই পশ্চিম উত্তর আফ্রিকার তুরস্ক, ইরাক এবং মরক্কোতে খেজুর ব্যবহার হয়ে আসছে। পবিত্র বাইবেলে পঞ্চাশেরও বেশি বার খেজুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামি দেশ গুলোতে পবিত্র রমজান মাসে ইফতারে খেজুরের ব্যবহার অনস্বীকার্য।  খেজুরে বিশাল পরিমাণে পুষ্টিমান রয়েছে। পটাসিয়াম উপাদান রোগীর খাদ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং খেজুর এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকা খেজুরে প্রায় ৮০% চিনি থাকে এবং বাদ বাকিতে রয়েছে খনিজ সমৃদ্ধ বোরন, কোবাল্ট, ফ্লোরিন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান খাদ্য হিসেবে খেজুর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আসুন আরো জেনে নিন খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে:-

¤ ভিটামিনের পরিমান :- খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন যার মধ্যে রয়েছে, বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫ ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়া যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। একই সাথে, খেজুর দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। তাই রাতকানা প্রতিরোধে খেজুর খুবই কার্যকরী। এছাড়া খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।

¤ আয়রনের পরিমান :- একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে খেজুর। আয়রন হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই যাদের হার্ট দুর্বল তাদের জন্য খেজুর হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ খাবার।

¤ চর্বি বা ফ্যাট : খেজুরে কোনও কোলেস্টেরল এবং বাড়তি পরিমাণে চর্বি থাকে না। তাই যাদের ডায়াবেটিস তারা খেতে পারেন।

¤ ক্যানসার প্রতিরোধ :- খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক ফাইবারে ভরপুর। যারা নিয়মিত খেজুর খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।

¤ রক্তস্বল্প – রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীরা প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন কারন খেজুর রক্ত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

¤ প্রোটিন – আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। খেজুর হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ।

¤ ক্যালসিয়াম :-  খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যা হাড় গঠনে সহায়ক ও মজবুত  করতে সাহায্য করে। এছাড়া খেজুর শিশুদের মাড়ি ও দাত শক্ত করতে সাহায্য করে।

¤ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য –  ডায়াবেটিস এর জন্য যারা চিনি খান না তারা খেজুর খেতে পারেন। চিনির বিকল্প হিসাবে খেজুরের রস ও গুড় খেতে পারেন।

¤ কোষ্ঠকাঠিন্য :- খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। কখনও কখনও ডায়রিয়ার জন্যেও এটা অনেক উপকারী। কারন এটি খাবারকে সঠিক ভাবে হজম করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। পর দিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি পান করুন।

¤ কর্মশক্তি বাড়ায় – খেজুর খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে কারন খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। সারাদিন রোজা রাখার পর রোজাদাররা যদি মাত্র ২টি খেজুর খান তবে খুব দ্রুত কেটে যাবে তাদের ক্লান্তি ও দুর্বলতা।

¤ ম্যাগনেসিয়াম :- প্রতিটি খেজুরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

¤ লিউটেন ও জিক্সাথিন:- খেজুরে লিউটেন ও জিক্সাথিন থাকায় তা রেটিনা ভালো রাখে।

¤  ঘুমানোর আগে স্বাস্থ্যকর হিসেবে খেজুর খেতে পারেন এটি আপনার অনেক উপকার করবে ইনশাআল্লাহ।

 

খেজুর খাওয়ার অপকারিতা

খেজুরএকটি পুষ্টিকর ফল যা খেতে কে না ভালোবাসে। আমরা জানি খেজুরের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই এই ফলের পুষ্টিগুণ ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা উচিৎ। কিন্তু উপকারের পাশা পাশি অল্প কিছু খেজুর খাওয়ার উপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাই খেজুর খাওয়ার আমাদের কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা থাকা অতি প্রয়োজন। তাই চলুন আমরা খেজুরের পুষ্টিগুণ ও অপকারিতা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল:-

খেজুরের অপকারিতা :-
¤ আমরা যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের খেজুর খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

¤ হজমের সমস্যা থাকলে ভারী খাবার খাওয়ার পরপরই খেজুর খাবেন না।

¤ আবার যাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি তাদের খেজুর খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

¤ যাদের ডায়রিয়া বা পাতলা মল হলে খেজুর ফল খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন।

খেজুর নিয়ে কিছু তথ্য

খেজুরের রস:-  বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর আফ্রিকা, ঘানা, আইভরি কোস্টে খেজুরের কিছু অংশ কেটে রস আহরণ করা হয়, যা খেজুরের রস নামে পরিচিত। এরপর রসটিকে গুড় বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়তে পরিণত করা হয়। উত্তর আফ্রিকায় এই প্রক্রিয়াটিকে লাগবি বলা হয়। রস বের করতে অনেক সময় লাগে যা তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। রস কেটে রস বের করতে দক্ষতা লাগে নতুবা খেজুর মরে যাবে।

খেজুর চাষঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা এবং দক্ষিণ ফ্লোরিডায় মেদজুল এবং ডেগেলেট নুরজাটি খেজুর চাষ করা হয়।