Home » ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি – প্রশিক্ষণ ও আয়-ব্যয় হিসাব

ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি – প্রশিক্ষণ ও আয়-ব্যয় হিসাব

ফাউমি মুরগি পালন, পাকিস্তানি মুরগি পালনে

বাংলাদেশের আবহাওয়া ফাউমি বা মিশরীয় ফাউমি মুরগি পালন বা পাকিস্তানি মুরগি পালনের  উপযুক্ত বলে স্বীকৃত। বর্তমান এদেশে পোল্টি শিল্পের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ফাউমী বা মিশরীয় ফাউমী (Fayoumi chicken) একটি মিশরীয় মুরগির জাত। এটি মিশরের ফাইয়াম প্রদেশ হতে এসেছে এবং এর নামকরণ ফাইয়াম থেকেই করা হয়েছে – যা কায়রোর দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং নীল নদীর পশ্চিম দিকে অবস্থিত।

সিলভার ক্যাম্পাইন থেকে ১৮০০ এর দশকের গোড়ার দিকে নেপোলিয়ন দখলের সময় এই মুরগি প্রবর্তিত হয়েছিল বলে মনে করাহয়। আরেকটি তত্ত্ব হল যে সে সময় তুরস্কের বিগা নামক একটি গ্রাম থেকে এদের প্রচলন হয়েছিল। ১৯৪০ এবং ১৯৫০ এর দশকে প্রতিষ্ঠিত ফাউমি মুরগি স্থানীয় কৃষকদের নিকট বিতরণ করেছে যাতে জাতটি সংরক্ষণ ও উন্নতি হয়। এটি একটি অতি প্রাচীন জাত হিসাবে বিশ্বাস করা হয়। আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি ( আইএসইউ  ) ১৯৪০-এর দশকে রোগ প্রতিরোধের অধ্যয়নের জন্য পোল্ট্রি জেনেটিক্স প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে তাদের কাছ থেকে ডিম পেরে ছিল দোআঁশলা আমেরিকান মুরগির সঙ্গে। পোল্ট্রি রোগ নিয়ন্ত্রণ করে এমন জিন বিশ্লেষণের জন্য আইএসইউ গবেষণা খামারে রাখা হয়েছিল। ১৯৯০-এর দশকে, দরকারী জিনগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল এই জন্য ফাউমি মুরগি পালনের আগ্রহ বেড়েছে।

ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি

No photo description available.

লক্ষ্য করা যায় মোট উৎপাদিত মুরগির মাংসের ৮০ ভাগ এবং প্রায় ৭৬ ভাগ ডিমও আসে গ্রামের দেশি মুরগি থেকে। তাই গ্রাম্য মুরগির উন্নয়ন ছাড়া এদেশের মুরগির উৎপাদন বাড়ানো খুবই কঠিন। বাংলাদেশে দেশী মুরগীর বাৎসরিক ডিম উৎপাদন মাত্র৪০-৫০ টি এবং প্রতিটা ডিমের গড় ওজন ৩৫ – ৪০ গ্রাম যা নিতান্তই সীমিত। গ্রাম বাংলার মুরগীর ডিম উৎপাদন যদি কোন-ভাবে বৃদ্ধি করা যায় তাহলে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। প্রয়োজনীয় আমিশের কিছুটা হলেও ঘাটতি পুরনে এক কার্য্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে । এক্ষেত্রে পরিবারের মহিলা এবং ছেলে মেয়েরা মুরগি পালনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে যা পরিবারিক অন্যান্য কাজের মাঝে মুরগির সামান্য যত্ব নিয়ে অতিরিক্ত কিছু আয় করা যায় এবং পারিবারিক পুষ্টি মিটানো যায়। এতে করে পারিবারিক অন্যান্য নিত্য নৈমিত্তিক কাজের কোন অসুবিধা হয় না।

ফাউমি নাম করন : মিশরের ফাউম প্রদেশে প্রথম এই জাতের মুরগি পাওয়া যায় বলে ইহার নামকরণ হয় “ফাওমি”।

ফাউমি মুরগি বৈশিষ্ট্য : ফাউমি জাতের মুরগি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি দেখতে খুবই সুন্দর। ফাওমি মুরগি আকারে ছোট, বড় ঘনকালো চোখ এবং উচু লেজ বিশিষ্ট। ফাওমি ডিম দেয়া মুরগি জাত হিসেবে পরিচিত। মোরগ অপেক্ষাকৃত বড় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মুরগীর গড় ওজন ১কেজি  থেকে ১.৫০০ কেজি। মুরগির ঘাড়ের পালক সাদাটে রূপালী এবং মোরগের সিকল পালক লম্বা এবং রূপালী বর্ণের হয়ে থাকে। এই মোরগ – মুরগির আকার দেশি মুরগির মত হয়ে থাকে। এদের চামড়া কালচে ও নীল বর্ণের এবং ইহাদের পা এর নলা ধূসর বর্ণের। কানের লতি লাল, চোখ গাঢ় বাদামী। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এই মুরগি খুব সহজে খাপ খাওয়াতে পারে এতে কোন অসুবিধা হয় না। ছেড়ে পালা অবস্থায় ১৫০-১৭০ দিনে প্রথম ডিম পাড়া শুরু করে। প্রতিটা ডিমের গড় ওজন ৩০-৪৫ গ্রাম হয়ে থাকে।

ফাউমি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ

May be an image of game fowl

ফাউমি মুরগির ঘর তৈরী :

  • আপনি যদি ছেড়ে পালন করেন তাহলে রাত্রে রাখার জন্যে বাশ বা কাঠেরএকটা ঘর তৈরী করতে হিবে।
  •  শোয়ার ঘর থেকে কিছুটা দূরে মুরগির ঘর তৈরী করা ভাল।
  • বাড়ীর পূর্ব উত্তর কোনে ঘর রাখা ভাল।
  • মুরগির ঘর ১৫ দিন পর পর পরিস্কার করা উচিৎ। পরিস্কারের পর তুষ বা কাঠের গুড়া দেওয়া প্রয়োজন।
  •  মুক্ত বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় ঘর করা উচিৎ।
  • পরিষ্কার বা টিউবওয়েলের পানি দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পাকিস্তানি মুরগি পালন

ফাউমি মুরগির খাবার ব্যাবস্থাপনা :

গ্রাম বাংলায় ছেড়ে পালা দেশী মুরগিকে তেমন কোন খাবার দেয় না। তবে এই ফাউমি বা পাকিস্তানি মুরগি পালনে থেকে আশানুরূপ ডিম পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে। সেক্ষেত্রে “ফাওমী” পালনে দেশী মুরগির থেকে একটু বেশি খাবার সরবরাহ করলেই চলবে । একটি খাবারের নমুনা নিম্নে দেয়া হলো যার ১/২ মুঠো সকাল বিকাল দিলে মুরগির ডিম উৎপাদন রোগ প্রতিরোধ সব দিক থেকে সুফল পাওয়া যাবে।

ফাউমি মুরগির স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা :

  • কোন মুরগি কখনও বাজার থেকে কিনে সরাসরি নিজের মুরগির সঙ্গে রাখা যাবে না।
  • কমপক্ষে ১৫ দিন পর পর ঘর পরিস্কার করতে হবে এবং মাসে একবার ব্রিচিং পাউডার ঘরে ছিটাতে হবে যদি সম্ভব না হয় তা হলে ছাই প্রতিবার পরিষ্কারের সময় ছিটাতে হবে।
  • বিভিন্ন বয়সের মুরগি একসঙ্গে রাখা যাবে না।
  • মুরগি অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করে রাখতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ ও পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • মুরগিকে সুস্থ্য রাখার জন্যে নিয়মিত বিভিন্ন টিকা বিশেষত রানীক্ষেত, ফাউল কলেরা, মুরগির বসন্ত প্রভৃতি টিকা দিতে হবে।
  • মুরগির খাবারের পাত্র এবং পানির পাত্র প্রতিদিন সকাল বিকাল পরিস্কার করতে হবে।

ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা

ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা :

ফাউমি মুরগির জন্য ১০০ কেজি খাবার তৈরির একটি তালিকা নিম্নে রূপ;

ক্রমিক উপাদান পরিমান
ভূট্টা ৫৬ কেজি
সয়াবিন মিল ২২ কেজি
রাইচ পালিশ ৭.৫ কেজি
প্রোটিন ৬০% ৩ কেজি
লাইমস্টোন / ঝিনুক চূর্ণ ১০ কেজি
লবণ ২৮০ গ্রাম
ডিসিপি ৫০০ গ্রাম
সালমোনেলা কিলার ৩২০ গ্রাম
প্রিমিক্স ৩০০ গ্রাম
১০ ডিএল- মিথিওনিন ১২৫ গ্রাম
১১ এল-লাইসিন ৬০ গ্রাম
১২ কোলিন ক্লোরাইড ৫০ গ্রাম
১৩ টক্সিন বাইন্ডার ১৫০ গ্রাম
১৪ সোডা ৭৫ গ্রাম
  মোট ১০০ কেজি

ফাউমি মুরগি পালনে লাভ

ফাউমি মুরগির আয়-ব্যয় হিসাব : ১০০টি ফাউমি মুরগি পালনে লাভ-ক্ষতির হিসাব নিম্নে তুলে ধরা হল;

ফাউমি মুরগিতে খরচ:
১. বাচ্চা ১০০*২০ টাকা: ২০০০ টাকা (৫% বেশী ধরে)
২. মেডিসিন ও টিকা @  ২০০ টাকা
৩. তুস: ২০০ টাকা
৪. খাদ্য ৫ বেগ- ১৫০০০  টাকা
৫. বিদ্যুত ও জালানী ১০০ টাকা
মোট খরচ: ১৭৫০০ টাকা।
নোট: ঘর এবং অন্যান্য ইকুইপমেন্ট হিসেবে ধরা হয়নি।(যেহেতু ফিক্সড খরচ)

ফাউমি মুরগিতে লাভ :
১. ১০০ মুরগি বিক্রিতে লাভ: প্রতিটি ৮০০ গ্রাম, কেজি ২৫০ টাকা : ২০০০০ টাকা
২. ফিডের বেগ বিক্রি ৫টি@১০ টা. : ৫০ টাকা
৩. লিটার বিক্রি ২০০ টাকা
সর্বমোট লাভ: ২০২৫০ টাকা

১০০ টি ফাউমি মুরগী থেকে নীট আয় হবে: ২০২৫০ টাকা – ১৭৫০০ টাকা। মোট লাভ: ২৭৫০ টাকা
সুতরাং একটা ১০০ টি মুরগী তে যদি ২৭৫০ টাকা নিট লাভ হয় তাহলে ১০০০ মুরগিতে লাভ হবে ২৭৫০০ টাকা মট মতো।

বিঃদ্রঃ – বাচ্চার দাম, ফিডের দাম এবং মুরগীর বাজার মূল্য (যখন বিক্রি করবেন) সবসময় উঠা নামা করে। এছাড়াও স্থানবেদে দামের কিছুটা পার্থক্য হয়। এই তিনটা জিনিসের হিসাব বসিয়ে আপনি খুব সহজে খরচ এবং লাভের হিসাব নিজে নিজেই করতে পারবেন।
ফাউমি মুরগি পালনের সুবিধা :

  • দেশী মুরগির মত চলে খেতে অভ্যস্থ এবং চালাক।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী।
  • ডিম পাড়া শেষে “তায়” বসে না।
  • দেশী মুরগির চেয়ে ২০-২২ গুণ বেশী ডিম দেয়।
  • দেশের সামগ্রীক ডিম উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব৷
  • পারিবারিক পুষ্টি মিটানো সম্ভব।
  • পারিবারিক শ্রমের সফল প্রয়োগে উৎপাদন বৃদ্ধি।
  • ফাওমী মুরগির চেহার আকর্ষণীয় তায় বিক্রয় করা সহজ।
  • ফুটানোর ডিম অধিক দামে বিক্রয় করা যায়।
  • মুরগির বিষ্ঠা সবজী বাগানে ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসম্মত শাক-সব্জী উৎপাদন, রাসায়নিক সারের প্রয়োগ কমানো ।
  • মুরগির বিষ্টা উৎকৃষ্টমানের জৈব সার।

♠♠ আপনার কৃষি সম্পর্কে কিছু বলার বা জানার থাকলে, আপনি আমাদের ফেজবুক পেজ বা ফেজবুক গ্রুপে যোগ দিতে পারেন এবং আপনার প্রয়োজনীয় মতামত জানাতে পারেন।

বিঃদ্রঃ গরু খামার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আপনি এই লিংকে ক্লিক করুনঃ আধুনিক গরুর খামার ঘর তৈরি-গরুর বাসস্থান তৈরি 

♦♥ তথ্যটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ♥♦

✔✔ এগ্রো হ্যাভেন বিডি ফেসবুক পাতা 
✔✔ Agro Haven BD ফেসবুক গ্রুপে

 

ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়, ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা, ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা, ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি, ফাউমি মুরগির ডিমের দাম কত, ফাউমি মুরগি কোথায় পাওয়া যাবে, ফাউমি মুরগি পালন বই pdf, ফাউমি মুরগি চেনার উপায়, মিশরী ফাউমি মুরগি, ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে, ফাউমি মুরগি কতদিন ডিম দেয়, ফাউমি মুরগি খাবার তালিকা, ফাউমি মুরগির খাবার পরিমান, ফাউমি মুরগির ঘর, ফাউমি মুরগির ছবি, ফাউমি জাতের মুরগি, ফাউমি মুরগি কোথায় পাওয়া যায়, ফাউমি মুরগি পালনের নিয়ম, ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি pdf, ফাউমি মুরগি পালনে লাভ, ফাউমি মুরগির বৈশিষ্ট্য, পাকিস্তানি মুরগি চেনার উপায়, পাকিস্তানি মুরগির বাচ্চা, পাকিস্তানি মুরগির ছবি, পাকিস্তানি মুরগি পালন পদ্ধতি, পাকিস্তানি ফাউমি মুরগি,