মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি বলতে, একক জলাশয়ে অধিক মাছ উৎপাদনের কৌশল কে বোঝায়। এই মিশ্র চাষের উৎপাদনের জন্য পানিতে প্রাকৃতিক খাবার, আলোক, তাপ ও জলবায়ু উৎকৃষ্ট ভাবে কাজে লাগবে। কারণ বিভিন্ন মাছের গতিবিধি, আচরণ, খাদ্যাভাস ভিন্ন ভিন্ন রকম। তাই আপনাকে সমন্বিত মাছ চাষ করতে হলে মাছ চাষের সকল তথ্য আপনার জানা উচিৎ। চলুন মিশ্র বা সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি,

কিছু উন্নত দেশ ব্যতিত পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের জনসাধরণের খাদ্যের পুষ্টি চাহিদা পূরণে মাছ বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। মানুষের খাদ্যের পুষ্টি উপদানগুলোর মধ্যে আমিষ অন্যতম। আর আমরা আমিষ পেয়ে থাকি প্রধানত দুটি উৎস থেকে। প্রথম উৎস উদ্ভিদ যেমন:- বিভিন্ন প্রকার সিমের বিচি, বাদাম, বিভিন্ন প্রকার ডাল এবং দ্বিতীয় উৎস প্রাণী:- যেমন বিভিন্ন প্রকার মাছ, দুধ-ডিম, বিভিন্ন পশু ও পাখির গোস্ত, ইত্যাদি। খাদ্য তালিকায় আমিষের চাহিদা পূরণে উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় উৎসের উপকরণ থাকা একান্ত প্রয়োজন।

 আরো পড়ুনঃ- কম খরচে মাছ চাষ

মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি

প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর অনেক দেশের মত আমাদের দেশও মাছের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। কারণ মাছ একদিকে সহজ পাচ্য (Easy Digestable), অপরদিকে সহজলভ্যও বটে। গ্রাম বাংলার অধিকাংশ পরিবার বাড়ীতে কেবল মাত্র মেহমান আসলেই বাজার থেকে গোস্ত কিনে থাকেন। অন্যথায় সাধারণভাবে প্রতিদিনই তারা মাছ কিনে তৃপ্ত থাকেন। মাছ বিশ্বের অনেক দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপকরণ।

No photo description available.

আমাদের দেশের মৎস্য সম্পদ কেবল পুষ্টি চাহিদায় পূরণ করে না এর মাধ্যমে দেশের বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে প্রতি বছর। দেশের বাৎসরিক উৎপাদিত মাছের একটি বড় অংশের (৫৩%) যোগান আসছে চাষের অধীনে (Aquaculture based) উৎপাদিত মাছ থেকে। আর এখাতের বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ব্যাংক, এফএও এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে খাদ্য হিসেবে গ্রহণকৃত মাছের তিন ভাগের দুই ভাগ (৬২%) চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে চাষের অধীনে উৎপাদিত মাছ।

আমাদের দেশের পটভূমিকায় এ বিষয়টি আরো বেশি প্রযোজ্য হবে। কারণ অপর দুটি উৎস যেমন সামুদ্রিক লবণাক্ত এবং অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছের আহরণ প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট নানাবিধ কারণে প্রতিনিয়ত কমে আসছে এবং ভবিষ্যতে আরো কমে যাবে বলে ধারণা করা হয়। অর্থাৎ বর্তমানের ন্যায় আগামী দিনগুলোতে মাছের চাহিদা পূরণে আমাদের মাছের চাষের পরিসর যেমন বাড়াতে হবে তেমন চাষের নিবিড়তাও বাড়াতে হবে উল্লেখযোগ্যভাবে। আমাদের দেশের সকল অঞ্চলে মাছ চাষের প্রসার সমভাবে ঘটে নাই। অনেক স্থানে পর্যাপ্ত সম্ভাবনা থাকলেও মাছ চাষের অবস্থা এখনও পশ্চাৎপদ। কিন্তু অনেক স্থানে চাষের ব্যাপক পরিমাণগত এবং গুণগত সম্প্রসারণ ঘটেছে যা আমাদের বাজারসমূহে মাছ সরবরাহে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

দেশের অঞ্চলভেদে মাছ চাষ পদ্ধতিতেও ব্যাপকভাবে ভিন্নতা লক্ষ করা যায় এবং অঞ্চল ভেদে বেশ কয়েকটি সফল পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে। এক জন মাছ চাষির মাছ চাষের পদ্ধতি নির্বাচনের জন্য এ সকল সফল পদ্ধতি জানা প্রয়োজন। আজকের নিবন্ধে মিশ্র চাষ পদ্ধতির মাছ চাষের অধিক উৎপাদনশীল কয়েকটি পদ্ধতির বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।

মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে মাছ চাষের বড় সুবিধা হলো- এ ক্ষেত্রে পুকুরের পানির বিভিন্ন স্তরকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে বিদ্যমান প্রাকৃতিক ও প্রদত্ত সম্পূরক খাদ্যের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় এবং পুকুরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও সুযোগ ঘটে। মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে একই স্থানে চাহিদা মত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন করা যেতে পারে। এর ফলে চাষি এক দিকে যেমন অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারেন, অপর দিকে চাষি অধিক লাভবানও হতে পারেন। সামগ্রিকভাবে মাছের একক চাষ পদ্ধতির তুলনায় মিশ্র চাষে অধিক সফলতা লাভ করা যায়।

সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি

মাছের প্রজাতি নির্বাচন:- মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে মাছ চাষে মাছের কোনো কোনো প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে তা নির্ভর করে চাষির মাছ চাষের সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতার ওপরে। কার্প মিশ্র চাষে সাধারণত অন্যান্য মাছের সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিলভার কার্প নির্বাচন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে ময়মনসিংহসহ দেশের কিছু অঞ্চলে দেশীয় শিং মাছের একক চাষ এবং কুমিল্লা, ভোলা, টাঙ্গাইল, গাজিপুর, নোয়াখালীসহ আরো কিছু জেলাতে তেলাপিয়ার একক চাষ হলেও বেশিরভাগ এলাকার পাঙ্গাস মাছের চাষ বর্তমানে এককভাবে না করে পাঙ্গাসের সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মিশ্র চাষের ব্যাপক প্রচলন হয়েছে। পাঙ্গাস মাছের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে পাঙ্গাস মূখ্য ফসল এবং অন্যান্য প্রজাতির মাছ গুলো সাথী ফসল হিসেবে উৎপাদিত হচ্ছে। নিম্নে উল্লিখিত সব কয়টি মিশ্র চাষ পদ্ধতিই লাভজনকভাবে মাঠ পর্যায়ে মাছ চাষ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রজাতির মিশ্রণের প্রচলিত বিভিন্ন ধরণ নিম্নে উল্লেখ করা হল।

পাঙ্গাসের সাথে মিশ্র মাছঃ-
১) পাঙ্গাসের সাথে কার্পজাতীয় মাছের চাষ।
২) পাঙ্গাসের সাথে তেলাপিয়া ও কার্প জাতীয় মাছের চাষ।
৩) পাঙ্গাসের সাথে তেলাপিয়া, কার্প এবং শিং মাছের চাষ।
৪) পাঙ্গাসের সাথে তেলাপিয়া, কার্প এবং মাগুর মাছের চাষ।
৫) পাঙ্গাসের সাথে তেলাপিয়া, কার্প এবং বাটা মাছের চাষ।
৬) পাঙ্গাসের সাথে কার্প এবং শিং মাছের চাষ।
৭) পাঙ্গাসের সাথে কার্প এবং মাগুর মাছের চাষ।
পাঙ্গাসের ন্যায় অনুরূপভাবে তেলাপিয়া মাছকে মূখ্য ফসল হিসেবে রেখে সে সাথে অন্যান্য প্রজাতির মাছের মিশ্র চাষও মাঠ পর্যায়ে সফলতার সাথে অনুসরণ করা হচ্ছে।

তবে তেলাপিয়া মাছের ক্ষেত্রে একক চাষের প্রচলন সব চেয়ে বেশি। এ মাছটির বাজার চাহিদা গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সবখানে সমোধিক। স্বল্প সময়ে এ মাছটি বাজারজাতকরণ করা যায় বলে চাষি এ মাছ চাষে বেশি আগ্রহী। বর্তমানে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের ভালো মানের উন্নত জাতের পোনা সহজলভ্য হওয়াতে এবং মাছ চাষের জন্য উন্নত মানের ভাসমান খাবার বাজারে আসাতে এ মাছ চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ চাষ করে বাজারে পাঠাতে চাষে কম সময় লাগে ফলে এ মাছের সাথে অন্য প্রজাতির মাছ ছাড়লে সে মাছ তেমন বড় হওয়ার সুযোগ পায় না। সাধারণত এ কারণে তেলাপিয়া মাছের একক চাষ বেশি জনপ্রিয়। এর পরেও মাঠ পর্যায়ে চাষিরা অধিক লাভের আশায় তেলাপিয়ার সাথে অন্যান্য প্রজাতির মাছ ছাড়েন যার কয়েকটি নমুনা নিম্নে দেয়া হল।

তেলাপিয়ার সাথে মিশ্র মাছঃ-
১) তেলাপিয়ার সাথে কার্প জাতীয় মাছের চাষ।
২) তেলাপিয়ার সাথে বাটা মাছের চাষ।
৩) তেলাপিয়ার সাথে শিং মাছের চাষ (এ ক্ষেত্রে শিং মাছ আহরণ করা হয় ২য় ফসল আহরণের সময়)।
৪) তেলাপিয়ার সাথে মাগুর মাছের চাষ (এ ক্ষেত্রে মাগুর মাছ আহরণ করা হয় ২য় ফসল আহরণের সময়)।
৫) তেলাপিয়ার সাথে গলদা চিংড়ি চাষ।

এখানে একটি বিষয় বলে রাখা দরকার যে, পাঙ্গাস কিংবা তেলাপিয়ার মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে কার্পজাতীয় মাছের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সিলভার কার্প মাছ মজুদ করা থেকে বিরত থাকা উত্তম। এ ধরনের চাষে সিলভার কার্প মাছ মজুদ করলে, সিলভার কার্প মাছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব হতে দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে সিলভার কার্প মাছটি খাবার গ্রহণ পদ্ধতিটা একটু ব্যতিক্রমধর্মী। এরা ফুলকার সাহায্যে পানি ফিল্টার করে খাবার গ্রহণ করে। এর ফলে পুকুরের পানিতে কোনো কারণে ক্ষতিকর ফাইটোপ্ল্যাংটন জন্মালে সিলভার কার্প মাছ এর ফুলকা আক্রান্ত হয় এবং মাছ মরতে শুরু করে। সাধারণত মাছে তেমন কোনো রোগের চিহ্ন দেখা যায় না।

পাঙ্গাস এবং তেলাপিয়া মাছের মিশ্রচাষে প্রচুর সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করতে হয়, ফলে খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ থেকে পানিতে নানা ধরনের ফাইটোপ্ল্যাংটন জন্ম নেয়, যার কোনো কোনোটি সিলভার কার্প মাছের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিগহেড মাছের উৎপাদন ভালো হতে দেখা যায়। আবার একই সাথে কাতল ও বিগহেড প্রজাতির মাছের একত্রে মিশ্র চাষে সন্তোষজনক উৎপাদন পাওয়া যায় না। কারণ উভয় প্রজাতির মাছ একই ধরনের খাবারের ওপর নির্ভরশীল।

পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি

পুকুরে মাছ ছাড়ার হারঃ- ওপরে মাছ চাষে মাছের কোনো কোনো প্রজাতি একত্রে চাষ করা যায় সে বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে। মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষে কোনো প্রজাতির মাছের পোনা কতটি ছাড়তে হবে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখতে হবে। মাছ চাষে মাছের ঘনত্ব নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাছের পোনা একবার পুকুরে মজুদ করা হয়ে গেলে আর সংশোধন করা যায় না। প্রকৃত পক্ষে অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নাই। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি মাছ কি হারে ছাড়তে হবে তা নির্ভর করবে পুকরের পানির গভীরতার ওপর। পুকুরের ক্ষেত্র ফলের চেয়ে পুকরের পানির আয়তন অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উন্নত বিশ্বে মাছ ছাড়া হয় পানির পরিমাণের (আয়তন বা গর্ত) ওপর বিবেচনা করে। জলাশয়টি কত শতক বা বিঘা সেটাও বিবেচনায় রাখা হয় তবে সেটাই মূখ্য নয়। অর্থাৎ মাছ চাষে পুকুরের পানির গভীরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত কম গভীর পানিতে (২-৩ ফুট) তেলাপিয়া মাছ চাষ ভালো হয়। আবার অধিক গভীর পুকরে (৫-৮ ফুট) পাঙ্গাস মাছ চাষ ভালো হয় এবং তুলনামূলক অধিক হারে পুকুরে মাছ ছাড়া যায়। এ সকল বিষয় ছাড়াও পুকরে মাছের ঘনত্ব কত হবে সেটা নির্ভর করে কোন ধরনের খাবার দিয়ে মাছ চাষ করা হবে। যত উন্নত মানের খাবার দিয়ে মাছ চাষ করা হবে ততই পুকুরের পানির পরিবেশ ভালো থাকবে এবং অধিক হারে মাছের পোনা মজুদ করা যাবে।

ভালো মানের খাবার সেটাকেই বলা হয় যার এফসিআর ভালো, অর্থাৎ যে খাবারে অবশিষ্টাংশ কম থাকে, যার সম্পূর্ণ অংশ মাছের পেশীতে রূপান্তরিত হয়। বাজারে যে ভাসমান খাবার পাওয়া যাচ্ছে তা যথেষ্ট ভালো খাবার হিসেবে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। কারণ মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণে কোনো কোনো কোম্পানির মাছের খাবার ১১০০-১২০০ গ্রাম মাছকে খাওয়ালে ১০০০ গ্রাম মাছ উৎপাদিত হতে দেখা গেছে।
এখানে মাঠ পর্যায়ে সফলভাবে বাস্তবায়িত অধিক উৎপাদন সক্ষম তিনটি নমুনা ঘনত্ব উল্লেখ করা হল।

সকল ক্ষেত্রেই পুকুরে তুলনামূলক বড় আকারের পোনা মজুদ করতে হবে। ১ম নমুনাটি কুমিল্লা অঞ্চলে প্রচলিত। এ অঞ্চলে ধানের জমিতে উচু আঁল বেঁধে কিছুটা অগভীর (গড় গভীরতা ৩ ফুট) জলাশয়ে মাছ চাষ করা হয়। চাষের সময় ৯ থেকে ১০ মাস। এ সময়ের মধ্যে পাঙ্গাস মাছ গড়ে ১১০০-১২০০ গ্রাম, কার্পজাতীয় মাছ গড়ে ১০০০ গ্রাম এবং তেলাপিয়া গড়ে ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজন এর হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বাৎসরিক গড় উৎপাদন প্রায় ৩০ টন/হেক্টর।

২য় নমুনাটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত সর্বাধিক ঘনত্বের মাছ চাষ নির্দেশ করছে। এখানে পুকরের পানির গভীরতা অবশ্যই ৬-৮ ফুট হতে হবে। এ পদ্ধতি মাছ চাষের সময় ৬ মাস এবং যে চক্রে শীতকাল পড়ে সেটি ৮ মাস প্রলম্বিত হয়। অর্থাৎ মোট ১৪ মাসে দুটি ফসল একটি পুকুর থেকে আহরিত হয়। এ ক্ষেত্রে পাঙ্গাস মাছের আকার ৮০০-৯০০ গ্রাম হয়। তেলাপিয়া ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম এবং কার্পজাতীয় মাছ গড়ে ৪০০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে গড় বাৎসরিক উৎপাদন প্রায় ৬০ টন/হেক্টর। এখানে উল্লেখ্য যে ২য় পদ্ধতির মাছ চাষের যে ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে সেখানে মাছ চাষে সাধারণ মানের (২৮% প্রোটিন) ডুবন্ত খাবার ব্যবহার করা হচ্ছে।

যদি আরো উন্নত মানের খাবার দেয়া হত তবে আরো অধিক উৎপাদন পাওয়া সম্ভব বলে ধরে নেয়া যায়। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে গিয়ে প্রধানত পুকুরের পানির পরিবেশগত সমস্যাই প্রধান হয়ে দেখা দেয়। এ জন্য নিয়মিত পুকুরে শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন অথবা ১০০ গ্রাম হারে জিওলাইট দিতে হবে। চুন অথবা জিওলাইটের পাশা পাশি ২-৩ মাস পর পর পুকুরে শতকে ১০০ গ্রাম হারে ব্লিচিং পাউডার দিতে হবে। পানি অধিক সবুজ হয়ে গেলে পুকুরে তুঁতে বা সিউইড বা ফাইটোপ্লাংটন রোধ করে এ ধরনের যে কোনো ওষুধ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও প্রয়োজনে শুষ্ক মৌসুমে পুকুরে বাহির থেকে পানি সরবরাহ করতে হবে।

ওপরে আলোচিত পুকুরে মাছ ছাড়ার হার স্থান ভেদে কিছুটা কম বেশ করে যে কোনো মাছ চাষি তার খামারে বিদ্যমান চাষ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে পারেন। প্রকৃত পক্ষে বর্তমানে দেশের কিছু কিছু এলাকার পুকুরের/জমির ইজারা মূল্য অধিক বৃদ্ধির কারণে মাছ চাষি তার চাষ পদ্ধতিতে গুণগত পরিবর্তন এনে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য মাছ চাষের বিভিন্ন পদ্ধতির মাঠ পরীক্ষণে প্রতিনিয়ত নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। এটাকে টিকে থাকার সংগ্রাম বলা যেতে পারে। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে মাছ চাষের নানা সফল পদ্ধতির প্রচলন হচ্ছে। এর মাঝ থেকে যার জন্য যে পদ্ধতি উপযুক্ত, জেনে বুঝে তা নিজের খামারে প্রয়োগ করতে হবে। তা হলে মৎস্য খামারে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করার পাশা পাশি মাছ চাষে অধিক লাভবান হওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

লেখক (মোঃ তোফাজউদ্দীন আহমেদ)

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *