Home » গরুর বাছুরের আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য়ের তালিকা-খাওয়ানোর নিয়ম ও ব্যবস্থাপনা

গরুর বাছুরের আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য়ের তালিকা-খাওয়ানোর নিয়ম ও ব্যবস্থাপনা

বাছুরের আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য়ের তালিকা

বাছুরকে আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম আমাদের দেশের অনেক গরু পালনকারীরাই জানেন না। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলগুলোতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু পালন করা হয়ে থাকে। গরু পালন লাভজনক পেশা হওয়ার কারণে দিন দিন গরু পালনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরু পালনের ক্ষেত্রে বাছুরের যত্ন নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাছুর একটু বড় হলে আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে। আজকে আমরা জানবো উন্নত ও অউন্নত বাছুরকে আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও বিস্তারিত

বাছুরের খাদ্য তালিকা

সাধারণত বাছুর জন্ম নেওয়ার ১ মাস পরে থেকেই একটু একটু করে কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। আর এর বেশ কিছুদিন পরে অর্থাৎ ২ মাস বয়স হলে আঁশ জাতীয় খাদ্য খাদ্য এবং দৈনিক ২৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
বাছুরের বয়স অনুযায়ী দানাদার খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ মাস বয়সে দৈনিক ৭৫০ গ্রাম, ৬ থেকে ৯ মাস বয়স পর্যন্ত ১ কেজি এবং ১ বছর বয়সে দৈনিক ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাসের পরিমাণও বাড়িয়ে দিতে হবে। কাঁচা ঘাসের পরিমাণ দৈনিক ৬ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে।

বাছুরের খাদ্য তালিকা

বাছুরের শাল দুধ (Colostrum)
বাছুরের জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘন্টা তাকে অবশ্যই মায়ের কোলস্ট্রাম বা শাল দুধ খাওয়াতে হবে। কোলস্ট্রাম বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম গঠনে সহায়তা করে। এই দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টিবডি থাকে যা নবজাতক বাছুরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।

বাছুরের শাল দুধ  বা কোলস্ট্রাম খাওয়ানোর নির্দেশিকা:

  • প্রথম ৬ ঘন্টার মধ্যে বাছুরকে শাল দুধ খাওয়ানো উচিত।
  • বাছুরের ওজনের প্রায় ১০% সমপরিমাণ শাল দুধ প্রথম দিনে খাওয়াতে হবে। যেমন, যদি বাছুরের ওজন ৩০ কেজি হয়, তবে তাকে প্রথম দিনে ৩ লিটার শাল দুধ খাওয়ানো উচিত।

২. বাছুরের দুধ খাওয়ানো
শাল দুধ খাওয়ানোর পর সাধারণ দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। সাধারণত, বাছুরকে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো হয়। মায়ের দুধ ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ফিড বা ফর্মুলা দুধও ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাছুরের দুধ খাওয়ানোর সময়কাল:

  • প্রথম ৪ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ২-৩ বার দুধ খাওয়াতে হবে।
  • ২ মাসের পর থেকে দিনে ২ বার দুধ খাওয়াতে হবে।
  • ৩-৪ মাস বয়স পর্যন্ত দুধ খাওয়ানো যায়, তবে বাছুরকে ধীরে ধীরে শক্ত খাদ্যের দিকে অভ্যস্ত করতে হবে।

৩. বাছুরের  দানাদার খাদ্য তালিকা (Concentrate Feed)
দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি বাছুরকে শক্ত খাদ্য খাওয়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে বাছুরকে ধীরে ধীরে দানাদার খাদ্য দিতে শুরু করা যায়। এটি বাছুরের পাকস্থলী ও হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

বাছুরের দানাদার খাদ্যের উপাদান:

  1. শস্য (Grains):ভুট্টা, গম, বার্লি ইত্যাদি শস্য খাদ্যের মূল উপাদান। শস্যে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা বাছুরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।
  2. প্রোটিন উৎস: সয়াবিন মিল, সরিষার খোল, সূর্যমুখী খোল প্রভৃতি প্রোটিন সরবরাহকারী খাদ্য।
  3. মিনারেল ও ভিটামিন: বাছুরের বৃদ্ধির জন্য মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এবং ভিটামিন এ, ডি, ই প্রয়োজন। এগুলো বাণিজ্যিকভাবে তৈরি প্রিমিক্সের মাধ্যমে সরবরাহ করা যায়।

বাছুরের দানাদার খাদ্য সরবরাহের নিয়ম:

  1. প্রথমে খুব অল্প পরিমাণে দানাদার খাদ্য দিয়ে শুরু করতে হবে। ৭-১০ দিনের মধ্যে বাছুর দানাদার খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
  2. বয়স অনুযায়ী প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দানাদার খাদ্যের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ২ মাস বয়সের বাছুরের জন্য প্রতিদিন ২৫০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দেওয়া যেতে পারে।

৪. বাছুরের শুকনো খাদ্য (Roughage)
বাছুরের খাদ্য তালিকায় শুকনো খাদ্যেরও গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণত ২-৩ সপ্তাহ বয়সের পর থেকে বাছুরকে ঘাস বা শুকনো খড় দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে বাছুরের পাকস্থলীর পূর্ণাঙ্গ বৃদ্ধি ঘটে এবং সঠিক হজম ক্ষমতা তৈরি হয়।

বাছুরের শুকনো খাদ্যের তালিকা:

  1. সবুজ ঘাস: পুষ্টিকর সবুজ ঘাস যেমন নেপিয়ার ঘাস, রাই ঘাস, লুসার্ন ঘাস ইত্যাদি।
  2. শুকনো খড়: ধানের খড়, গমের খড়, বার্লির খড় ইত্যাদি। এগুলো হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

বাছুরের শুকনো খাদ্য সরবরাহের নিয়ম:

  1. প্রথমে অল্প পরিমাণে শুকনো খাদ্য দিন যাতে বাছুর সেটিতে অভ্যস্ত হতে পারে।
  2. বাছুর ১ মাস বয়স হলে প্রতিদিন ৫০-১০০ গ্রাম শুকনো খড় দেওয়া যেতে পারে।

৫. বাছুরের পানি সরবরাহ
বাছুরকে সবসময় পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা উচিত। বাছুরের খাদ্য তালিকায় পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করে।

বাছুরের পানির নিয়মাবলী:

  1. বাছুরের বয়স ২ সপ্তাহ পূর্ণ হলে তাকে পানি দেওয়া শুরু করা উচিত।
  2. প্রতিদিন তাজা ও বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে।
  3. গরমকালে বেশি পানি দেওয়া উচিত এবং ঠাণ্ডা কালে কিছুটা কম।

বাছুরের বাছুরের খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরামর্শ

  1. ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনুন: বাছুরের খাদ্য তালিকায় কোনো পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে হঠাৎ পরিবর্তন না করে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা উচিত।
  2. বাণিজ্যিক ফিড ব্যবহারে সতর্কতা: দানাদার খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ফিড ব্যবহার করলে সেটির মান নিশ্চিত করুন। স্থানীয় বাজারের মানহীন ফিড বাছুরের ক্ষতি করতে পারে।
  3. পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বাছুরের খাদ্য তালিকার পাশাপাশি তার স্বাস্থ্য সম্পর্কেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় টিকা ও পুষ্টি সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে।

বাছুরের দানাদার খাদ্য তালিকা

বাছুরের দানাদার খাদ্যের পরিমাণঃ

দানাদার খাদ্য়ের নাম পরিমান
গমের ভূষি ৩.৫ কেজি
খেসারী ভাঙ্গা ১.৫ কেজি
ছোলা ভাঙ্গা ১ কেজি
গম/ভূট্টা ভাঙ্গা ২.৫ কেজি
তিলের খৈল ১ কেজি
খনিজ মিশ্রণ ৪০০ গ্রাম
লবণ ১০০ গ্রাম
মোট খাদ্য  = ১০ কেজি

 

বাছুরের আঁশ জাতীয় খাদ্য তালিকা

বাছুরের বয়স অনুসারে আঁশ জাতীয় খাদ্যঃ

বাছুরের বয়স কাঁচা ঘাস খড়
৬ থেকে ৯ মাস ৪ থেকে ৫ কেজি ১ থেকে ২ কেজি
৯ থেকে ১২ মাস ৫ থেকে ৬ কেজি ২ থেকে ৩ কেজি
১২ মাস থেকে গর্ভধারণ পর্যন্ত ৬ থেকে ৮ কেজি ৩ থেকে ৪ কেজি

বাছুরের আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম

বাছুরের আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম আমাদের দেশের অনেক গরু পালনকারীরাই জানেন না। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলগুলোতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু পালন করা হয়ে থাকে। গরু পালন লাভজনক পেশা হওয়ার কারণে দিন দিন গরু পালনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরু পালনের ক্ষেত্রে বাছুরের যত্ন নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকে আমরা জানবো বাছুরকে আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে-

বাছুর একটু বড় হলে আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে। নিচে বাছুরকে এসব খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হল-
সাধারণত বাছুর জন্ম নেওয়ার ১ মাস পরে থেকেই একটু একটু করে কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। আর এর বেশ কিছুদিন পরে অর্থাৎ ২ মাস বয়স হলে আঁশ জাতীয় খাদ্য খাদ্য এবং দৈনিক ২৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।

বাছুরের বয়স অনুযায়ী দানাদার খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ মাস বয়সে দৈনিক ৭৫০ গ্রাম, ৬ থেকে ৯ মাস বয়স পর্যন্ত ১ কেজি এবং ১ বছর বয়সে দৈনিক ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাসের পরিমাণও বাড়িয়ে দিতে হবে। কাঁচা ঘাসের পরিমাণ দৈনিক ৬ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে।

বাছুরের খাদ্যের পরিমাণ ও কতদিন দুধ খাওয়াতে হবে

১. জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা: শাল দুধ

  • শাল দুধ: বাছুরের জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় মায়ের শাল দুধ খাওয়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন, অ্যান্টিবডি, এবং পুষ্টি উপাদান যা বাছুরের ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে।

২. প্রথম ২ সপ্তাহ: দুধ ও তরল খাদ্য

  • মায়ের দুধ বা দুধ বিকল্প: প্রথম দুই সপ্তাহে বাছুরের প্রধান খাদ্য হবে মায়ের দুধ অথবা দুধ বিকল্প (যদি মায়ের দুধ পর্যাপ্ত না হয়)।
  • পরিমাণ: প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার দুধ প্রয়োজন হতে পারে, যা বাছুরের শারীরিক ওজন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।

৩. দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাস: শক্ত ও তরল খাদ্যের মিশ্রণ

  • কনসেনট্রেট (Concentrate): ধান, গম, ভুট্টা এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য (যেমন সোয়াবিন মেশানো খাদ্য) বাছুরের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • দুধ: প্রতিদিন দুধের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা যেতে পারে। তবে সপ্তাহে ৫-৬ লিটার দুধ দেওয়া যেতে পারে।
  • কাঁচা ঘাস ও খড়: দুই সপ্তাহের পর থেকে ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাস এবং খড় খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে। তবে প্রথমে ছোট পরিমাণে খাওয়ানো উচিত।

৪. দুই থেকে ছয় মাস: শক্ত খাদ্য ও ঘাস

  • শক্ত খাদ্য: এ সময় থেকে কনসেনট্রেট বাড়িয়ে দিনে প্রায় ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ঘাস ও খড়: পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ঘাস এবং খড় সরবরাহ করতে হবে। বাছুরের হজম ক্ষমতা শক্ত খাদ্যের প্রতি অভ্যস্ত হবে।

৫. ছয় মাস থেকে এক বছর: সম্পূর্ণ ঘাস ও কনসেনট্রেট খাদ্য

  • সবুজ ঘাস: দিনে প্রায় ৫-৬ কেজি সবুজ ঘাস খাওয়াতে হবে।
  • কনসেনট্রেট: ৬ মাস পর থেকে দিনে ১-২ কেজি কনসেনট্রেট খাদ্য দেওয়া

গরুর বাছুরের খাদ্য ব্যবস্থাপনা একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হলেও সঠিক পরিকল্পনা ও যত্নের মাধ্যমে তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। জন্মের পর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় পর্যন্ত বাছুরকে সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করা গেলে, তারা সুস্থ ও উৎপাদনশীল গরুতে পরিণত হবে।

 

আরো তথ্য জানতে আমাদের কমেন্ট করুন এবং এই  AgroHavenBD লিংকে  ক্লিক করে আমাদের সাথে থাকুন।